প্রথমেই দরকার মানসিক রোগ নির্ণয়

রাজধানী ঢাকা থেকে বাংলানিউজের একজন পাঠক জানিয়েছেন তার মানসিক সমস্যার কথা। ৩১ বছর বয়সী এই পাঠক তার বোনের বাড়িতে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে।

ঢাকা: রাজধানী ঢাকা থেকে বাংলানিউজের একজন পাঠক জানিয়েছেন তার মানসিক সমস্যার কথা। ৩১ বছর বয়সী এই পাঠক তার বোনের বাড়িতে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে।

আপনার সমস্যা

“আমি ১০ মাস আগে বিবাহ করিয়াছি। আমি একটি এনজিওতে কম্পিটার অপারেটর পদে চাকুরি করিতেছি দীর্ঘ প্রায় ১০ বৎসর যাবৎ। আমি ছোট বেলা হইতে সব সময় যে কোন বিষয়ের উপর অবাস্তব সন্দেহ, ভয় ও বিষন্নতায় ভুগি এবং মাঝে মাঝে আমার ঘুমও ঠিক মত হইতেছে না। আমার গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ থাকলে দুই দিন আগ থেকে টেনশনে থাকি, আমার যদি ঘুম না হয় তাহলে আমি কাজটিতে অংশগ্রহণ করিতে পারিব না ফলে আমার ক্ষতি হইতে পারে। রাত্রে বিছানায় শোয়ার পর ঘুম আসতে দেরি হইলে আমার ভয় ও অস্থির লাগে। আমি তিন বার মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। বর্তমানে আমি রিভোট্রিল ২ মি. গ্রাম, রিজডন ১ মি. গ্রাম, রিলাফিন ৫০ মি. গ্রাম, ইনডেভার ১০ মি. গ্রাম এবং জেপটল ২০০ সি আর সেবন করিয়া আসিতেছি। কিন্তু তেমন কোন ভাল ফল পাইতেছি না বিধায় আপনাদের মাধ্যমে ভালো কোনো মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ চাইতেছি। পরামর্শ দিলে আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকিব।”

আমাদের সমাধান

উত্তর: আপনার সমস্যা যে অনেক দিনের তা বোঝা গেলো। এটাও বোঝা গেলো সমস্যা মুক্ত হওয়ার ইচ্ছা এবং চেষ্টা দু’টিই আপনার আছে। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এসব সমস্যার ক্ষেত্রে একবার দু’বার ডাক্তারের কাছে যাওয়া যথেষ্ট নাও হতে পারে। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আপনাকে বেশ কয়েক দিনই ডাক্তারের কাছে দেখা করতে হবে। আপনি যেসব ওষুধের কথা লিখেছেন, এতো ওষুধ আপনার দরকার নাও লাগতে পারে। আপনার চিকিৎসার জন্য প্রথমেই দরকার আপনার মানসিক রোগটি কি, তা নির্ণয় করা।

অনেকেই মনে করেন, মানসিক রোগের আবার প্রকার কি? বিষয়টি ঠিক না, মানসিক রোগও অনেক। প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। যাই হোক, আপনার রোগটির নির্ণয়ের পর আপনার চিকিৎসার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা যাবে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, ওষুধের পাশাপাশি আপনাকে সাইকোথেরাপিও নিতে হবে। যেহেতু আপনি ঢাকায় থাকেন, আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগে যোগাযোগ করার জন্য। ঠিক মতো চিকিৎসা করালে আপনার সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে আশা করছি।

আপাতত আপনি যা করতে পারেন

-ট্যাবলেট- আরপোলাক্স ২০মি গ্রা. (সিটালোপ্রাম) সকালে একটা নাস্তার পর খেতে পারেন। -ট্যাবলেট- ইনডেভার ১০মি গ্রা. (প্রোপনলল) সকালে একটা, রাতে একটা এবং -ট্যাবলেট- রিভোট্রিল ০.৫ মিগ্রা. (ক্লোনাজিপাম) সকালে অর্ধেক ও রাতে একটা খেতে পারেন।

 

আপনি বিষণ্নতায় বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, সন্দেহ নেই।

স্যার,

আমি আপনাদের বাংলানিউজ২৪ এর মনোকথা বিভাগের লেখা নিয়মিত পড়ি। আপনার লেখাটা আমার বেশি ভাল লেগেছে বলে আমি আপনাকে লিখছি। মানসিক রোগ সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিলো না। আপনাদের লেখাগুলো থেকে আমি জানতে পারলাম, সাথে নিজেকের সমস্যাকেও বুঝতে পারলাম। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলেছি। এটা বুঝতে যে, আমি একজন মানসিক রোগী। আসলে এটা আমার বোঝার আগে আমার আপনজনদের বোঝা উচিৎ ছিল। আমাদের মতো ফ্যামিলিতে মানসিক রোগকে রোগ বলে গণ্য করা হয় না। তারা আজও জানে না এ রোগের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কি হবে। আমি নিজের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছি না , আমার মাথা কাজ করে না। কোনো কিছু লিখতে গেলে, কিংবা বলতে গেলে আমি বলতে পারি না। বর্তমানে আমি মহা সমস্যায় আছি। আমার মনে হচ্ছে আমি আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় যাচ্ছি। আমার উচিৎ আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। কিন্তু আমি তাও পারি না। কিভাবে, কোথায়, কেমন করে আমি যাব বুঝতে পারি না। উচিৎ আমার কোনো অভিভাবকের আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তাও সম্ভব না। আমি কি দিয়ে বোঝাব, বুঝতে পারছি না, আমার মনে হচ্ছে আমি দিন দিন কোনো এক ব্ল্যাক হোলের ভিতরে চলে যাচ্ছি। সুইসাইড করার প্রবণতা আমার ভিতরে খুব বেশি পরিমাণে। অন্তত মা বাবা বেঁচে থাকতে আমি তা করতে চাই না। আমি আপনাদের কাছে এই কটা দিন বাঁচতে চাই, যত দিন না আমার বাবা মা মারা যায়। আমাকে সাহায্য করুন। আমার নিজের পক্ষে যতটা সম্ভব চেষ্টা করিছি ভাল থাকার কিন্তু পারছি না। আমি অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু পারছি না বরং না লিখতে গিয়ে বুক ফেটে কান্না আসছে। আমি জ্ঞান হবার পর মনে পড়ে না কোনো ডক্টরের কাছে গিয়েছি। শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা আমার হয়নি কোনো দিন। তবে দিনে দিনে মনের ভিতরে যে একটা রোগ পুষে রেখেছি তা আমি কখনও বুঝতে পারি নাই। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। যদি আপনি রুগীদের প্রতি আন্তরিক হন, যদি আমার মতো একজন মানুষের উপকার করতে চান তবে আমাকে আপনার সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেন। তা না হলে আমি কোথায় থেকে সুচিকিৎসা পাবো সেটা বলে দিতে পারেন। আমার প্রতি একটু দয়া করেন। আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ এই সমস্যায় ভুগছি। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। উত্তর: আপনার লেখাটি আমি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আপনার কষ্টের কথা শুনে দুঃখই পেলাম। হ্যা, এটা সত্যি এখনো আমাদের দেশের অনেক মানুষ মানসিক রোগ বিষয়ে অনেক কিছু জানে না। অনেকে জানলেও মানতে চায় না। তাতে করে, কপাল পোড়ে আপনাদের মতো মানুষদের। সমস্যা দীর্ঘায়িত হয়। কষ্ট বাড়তে থাকে। আপনার লেখা প্রত্যেকটি লাইনই দীর্ঘশ্বাস ভরা। বাবা-মায়ের প্রতি আপনার শ্রদ্ধাবোধ- ভালোবাসা আমাকে স্পর্শ করেছে। দেরি হয়তো আপনার হয়েছে, কিন্তু এখন যেহেতু সমস্যাটি আপনি বুঝতে পেরেছেন। দেরি না করেই চিকিৎসা শুরু করুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আবার সব কিছু সুন্দর হয়ে উঠবে। আপনার ভবিষ্যত, মা-বাবা সব কিছুকেই আপনি নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবেন। আপনি বিষণ্নতায় বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, সন্দেহ নেই। আপনি যেহেতু খুলনার কাছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন। ঢাকায় এলে, আমাদের সাথে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে, দেরি না করে এখুনি চিকিৎসা শুরু করুন। আপাতত, টেবলেট- সেরোলাক্স (সারট্রালিন) ৫০ মিগ্রা, সকালে নাস্তার পর একটা করে শুরু করুন। এক সপ্তাহ পর সেরোলাক্স (সারট্রালিন) ১০০ মিগ্রা করে খাবেন। সাথে টেবলেট- ডিসোপেন (ক্লোনাজিপাম) ০.৫ মিগ্রা, সকালে অর্ধক ও রাতে একটা করে খাওয়া শুরু করুন। যদি সম্ভব হয় দুই সপ্তাহ ওষুধ চলার পর, কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন দুই সপ্তাহ ওষুধ খেলেই আপনার সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হবে না। এসব ওষুধ পূর্ণ মাত্রায় কাজ করতে অনেক সময়, অন্তত ৬ সপ্তাহ লাগতে পারে। তারপরেও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। সুতরাং তাড়াহুড়া করবেন না। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন। আপনার সমস্ত কষ্ট ধীরে ধীরে কেটে যবে, গভীরভাবে সেই কামনা করছি।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

About Author